ক্ষমাপ্রদর্শন

 ্তুমি কি সত্যি ক্ষমার মানুষ? করছি ক্ষমা পরিত্রাণের

গন্ধ ভরা জল ছিটিয়ে তুলছি ঘরে, কৃতজ্ঞতা

তোমায় আমি বদলে দিয়ে কৃতজ্ঞতা তুলছি ঘরে

আকাল পোশাক বদলে দিয়ে রাখালে পোশাক তুলছি ঘরে !


তুমি কি সত্যি ক্ষমার মানুষ? করছি ক্ষমা পরিত্রাণের

একজনমে এত ক্ষমা তুমি কি তাই পাওয়ার যোগ্য হে মন আমার

করছি ক্ষমা করছি ক্ষমা ;

এখন তুমি সংসারে যাও, তোমার শিশু সমস্যাদি

সংগঠন আর নিদ্রা এবং লবণ মাংস মহোৎসবের

রৌদ্রমেঘের পাশে দাঁড়াও, কৃতজ্ঞতা এখন তুমি 

কৃতজ্ঞ হও কৃতজ্ঞ হও !


একজনমে পাপ করেছো , পাপের ছায়া পরিত্রাণের গন্ধ হলো একজনমে

খিড়কী দুয়ার এখন তোমার খিড়কী দুয়ার, ঝাপসা স্মৃতি রহস্য তার

জান্‌লা থেকে জান্‌লা দেখায় অতীত থেকে অতীত দেখা


একটু একটু তাঁদের ছায়ায় বেড়ে ওঠো এখন তুমি একটু একটু

তাদের বুকে তাদের চোখে তাদের ছায়ায় বেড়ে ওঠো,


হে মন তুমি অধঃপতন

থেকে এবার বেড়ে ওঠো !

সূচীতে ফিরে যান

উদিত দুঃখের দেশ

 উদিত দুঃখের দেশ, হে কবিতা হে দুধভাত তুমি ফিরে এসো !

মানুষের লোকালয়ে ললিতলোভনকান্তি কবিদের মতো

তুমি বেঁচে থাকো

তুমি ফের ঘুরে ঘুরে ডাকো সুসময়!

রমনীর বুকের স্তনে আজ শিশুদের দুধ নেই প্রেমিক পুরুষ তাই 

দুধ আনতে গেছে দূর বনে!

শিমুল ফুলের কাছে শিশির আনতে গেছে সমস্ত সকাল!

সূর্যের ভিতরে আজ সকালের আলো নেই সব্যসাচীর তাই 

চলে গেছে , এখন আকাল

কাঠুরের মতো শুধু কাঠ কাটে ফল পাড়ে আর শুধু খায়!


উদিত দুঃখের দেশ তাই বলে হে কবিতা , দুধভাত তুমি ফিরে এসো,

সূর্য হোক শিশিরের ভোর, মাতৃস্তন হোক শিশুর শহর!


পিতৃপুরুষের কাছে আমাদের ঋণ আমরা শোধ করে যেতে চাই!

এইভাবে নতজানু হতে চাই ফলভারানত বৃক্ষে শস্যের শোভার দিনভর

তোমার ভিতর ফের বালকের মতো ঢের অতীতের হাওয়া

খেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে চাই !


হে কবিতা তুমি কি দ্যাখোনি আমাদের ঘরে ঘরে তাঁতকল?

সাইকের পথিক?


সবুজ দীঘির ঘন শিহরণ? হলুদ শটির বন? রমণীর রোদে

দেয়া শাড়ি? তুমি দ্যাখোনি আমাদের 

আত্মহুতি দানের যোগ্য কাল! তুমি কি পাওনি টের

আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া চোখের কোণায় তুমি কি বোঝো নি আমাদের

হারানোর, সব হারানোর দুঃখ - শোক? তুমি কি শোনোনি ভালোবাসা

আজও দুঃখ পেয়ে বলে, ভালো আছো হে দূরাশা , হে নীল আশা?

সূচীতে ফিরে যান

কালো কৃষকের গান

 দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও আমি অনাবাদী রাখবো না আর আমার ভেতর !


সেখানে বুনবো আমি তিন সারি শুভ্র হাসি, ধৃতিপঞ্চইন্দ্রিয়ের

সাক্ষাৎ আনন্দময়ী একগুচ্ছ নারী তারা কুয়াশার মতো ফের একপলক

তাকাবে এবং বোলবে, তুমি না হোমার? অন্ধ কবি ছিলে? তবে কেন হলে 

চক্ষুষ্মান এমন কৃষক আজ? বলি কী সংবাদ হে মর্মাহত রাজা?

এখানে আঁধার পাওয়া যায়? এখানে কি শিশু নারী কোলাহল আছে?

রুপশালী ধানের ধারণা আছে? এখানে কি মানুষেরা সমিতিতে মালা

পেয়ে খুশী?


গ্রীসের নারীরা খুব সুন্দরের সর্বনাশ ছিল ! তারা কত যে উল্লুক !

উরুভুরুশরীর দেখিয়ে এক অস্থির কুমারী কত সুপুরুষ যোদ্ধাকে

তো খেলো !


আমার বুকের কাছে তাদেরও দুঃখ আছে, পূর্বজন্ম পরাজয় আছে

কিন্তু কবি তোমার কিসের দুঃখ? কিসের এ হিরণ্ময় কৃষকতা আছে?

মাটির ভিতরে তুমি সুগোপন একটি স্বদেশ রেখে কেন কাঁদো

বৃক্ষ রেখে কেন কাঁদো? বীজ রেখে কেন কাঁদো? কেন তুমি কাঁদো?

নাকি এক অদেখা শিকড় যার শিকড়ত্ব নেই তাকে দেখে তুমি আজ?

ভীত আজ তোমার মানুষ বৃক্ষশিশু প্রেম নারী আর নগরের নাগরিক ভুমা?


বুঝি তাই দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও তুমি অনাবাদী রাখবে না আর

এসিইয়েটার থেকে ফিরে এসে উষ্ণ চাষে হারাবে নিজেকে, বলবে

ও জল , ও বৃক্ষ, ও রক্তপাত, রাজনীতি ও নিভৃতি , হরিৎ নিভৃতি

পুনর্বার আমাকে হোমার করো,সুনীতিমূলক এক থরোথরো দুঃখের

জমিন আমি চাষ করি এ দেশের অকর্ষিত অমা!


সূচীতে ফিরে যান



মানুষ

(মুশারর্‌ফ রসুলকে)
আমি যেনো আবহমান থাকবো বসে
ঠুকরে খাবো সূর্যলতা গাছের শিকড়
অন্ধকারের জল
আমি যেনো অনাদিকাল থাকবো বসে
বিশ্রুতিময় জীবনে কল্লোল।

আমি যেনো আবহমান থাকবো বসে 
আবহমান আমিই কল্লোল
সময় থেকে সভ্যতাকে রাখবো ঢেকে
যুদ্ধ মড়ক নগ্ন ফলাফল।

স্রোতে রাজহাঁস আসছে

পুনর্বার স্রোতে ভাসছে হাঁস , ভাসতে দাও 
কোমল জলের ঘ্রাণ মাখুক হাঁসেরা;
বহুদিন পর ওরা জলে নামছে, বহুদিন পর ওরা কাটছে সাঁতার
স্রোতে রাজহাঁস আসছে, আসতে দাও,

বহুদিন পর যেনো রোদ আসছে, আসতে দাও
নত হতে দাও আকাশকে,
আর একটু নত হোক আলো
আর একটু নির্জন হোক অন্ধকার!

আজ তুমি, পরে নাও তোমার গহনা, দুল
তোমার আঙ্গুল হোক হেমন্তের ফুল,
আমি শুঁকি, শুঁকতে দাও!

বহুদিন পর যেনো শুঁকছি বকুল!
বহুদিন তোমার ভিতরে যাইনা, বহুদিন বকুল ফুলের ঘ্রাণ
পাইনা এ মনে!

মনে করতে দাও তবু কোনখানে বকুলবাগান ছিল
গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি
উঁচু আসন, সিংহাসন 
মনে করো, মনে কোরে নাও
আমাদেরও সিংহাসন আছে আজও
আমাদের হাজার দুয়ারী বাড়ি আছে

মাটির ময়ূর, ঠোঁটে ঠোঁটে, ফুলে ফুলে
লুকোনো ডাকবাক্‌স আছে সবুজের কাছে
মনে করো আমাদেরও ভালোবাসা আছে
খাগের কলমে লেখা তাদের অক্ষরগুলি
ধানের শীষের মতো টলমলায় সেখানে শরীরে

তুমি মনে করো, মনে করে নাও
তোমার শরীরে শাড়ি,
গেরস্থের হাজার দুয়ারী ঘরবাড়ি
আলো আর অন্ধকার মনে করো, মনে করে নাও

আমরা নৌকার জলে ভাসতে ভাসতে যেনো প্রতীকের হাঁস
ঐ রাজহাঁস
জল থেকে আরো জলে,
ঢেউ থেকে আরো ঢেউয়ে ছড়াতে ছড়াতে 
পৌঁছে যাবো আগে।

ক্লান্ত কিশোর তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়

দুপুর ঘুরে কিশোর তুমি বিকেলবেলায়
বাড়ি ফিরলে ক্লান্ত দেখায় ক্লান্ত দেখায়।
ক্লান্ত মুখটি ক্লান্ত দেখায়, ক্লান্ত চোখটি ক্লান্ত দেখায়।

দুপুর ঘুরে কিশোর তুমি বিকেলবেলায়
বাড়ি ফিরলে ক্লান্ত দেখায়! ক্লান্ত দেখায়!

কোথায় ঘুরে সারাদুপুর, ক্লান্ত কিশোর কোথায় ঘোরে?
বুকের মধ্যে কিসের একটা কঠিন দুঃখ রুক্ষ দুপুর শাসন করে,
কিশোর তুমি তার ভিতর বসেই থাকো বাড়ি ফেরোনি... বাড়ি ফেরোনা! 

একহারা শরীর দোহারা জামা, দু'হাত যেনো দগ্ধ তামা,
অভিমানে বাড়ি ফেরোনা, রক্ত চক্ষু শক্ত চোয়াল
সূর্য ঘেরে সকল দেয়াল ভেঙে তুমি কোথায় যে যাও...
অভিমানে বাড়ি ফেরোনা বাড়ি ফেরোনা!

উত্তোলিত হাতের মুষ্ঠি, কী তুমি চাও?
সর্বনাশ? না সুহৃদ আকাশ? ফিরে তাকাও না, রাস্তা চলো?

কিসের একটা কঠিন দুঃখ যেনো তোমাকে পাথর ছোড়ে
যেনো তোমাকে আউছি করে?
অভিমানে বাড়ি ফেরোনা, সারাদুপুর বাড়ি ফেরোনা বাড়ি ফেরোনা 
কোথায় যে যাও ...

বিকেলবেলায় যখোন ফেরাও পা দুটিকে, ক্লান্ত দেখায়
ক্লান্ত কিশোর তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়, 
ক্লান্ত দেখায়! তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখায়! 



সাইকেল

সাইকেল ছিল প্রতিবেশীর কলেরা রোগে দ্বিপ্রহরে কাফন মতো রৌদ্র খুলে
শ্যাম ডাক্তারকে ডেকে আনা;
সাইকেল ছিল মেঘমাখানো বিকেলে খালার পাহাড়ভূমির সে স্থলপদ্ম!
রাত্রিবেলা নারীশরীরের শৌখিন ঘর! আঙ্গিনাতে কাঠবাদাম!
সাইকেল ছিল মরণদাসীর বৈষ্ণবআখড়া, শীতকল্যাণে
খুলনা গিয়ে ছবিঘরে সচল দৃশ্য!

লম্বালম্বি গাছের মতো মর্মরিত সেই লোকটা,
সন্তপুরুষ বাল্‌মীকিকে দেখিনি, কিন্তু তাকে দেখে মনে হতো,
বাল্‌মীকি কি অমন ছিলেন?

সাইকেল ছিল বাঁশবেড়িয়ার বাঁশের সাঁকো,
কুমারী মেয়ের আত্নহত্যা,

যুক্তফ্রন্টের ইলেকশনে কিশোর ক'জন
স্কুলবোর্ডিং- এ শরনার্থী সারাটা রাত কাটিয়ে দিলুম হরিণ নিয়ে! 
সেই হরিণটা আর দেখিনা, বুকেও নয় বনেও নয়!

সে জোৎস্নাও আর আসে না!
সাইকেল ছিল পরস্পরের কুশলবার্তা, নম্রতায়িত
লঞ্চে কোরে হরিদাশপুর, একহপ্তাকার কবিগানের গৃহীত শ্রোতা,

সাইকেল ছিল যেদিন ওরা মানুষ মারলো মানুষ মারলো অপকৃষ্ট
সেদিন স্বর্গ ধর্ম ভাঙা লাথি মেরে ঈশ্বরমূলে।


ফেরার আগে

(গোলাম সাবদার সিদ্দিকীকে)
এ কথা তো ঠিকই 
ফেরার সময় হলে যা যার মন্তব্যে ফিরে যাবো।
কিন্তু তার আগে এই অন্ধকার 
আলোর ভিতরে আলো
সমাজের ভালো মানুষের সমস্ত জমকালো খেলা 
নারীর নিকটে গিয়ে এক আধরাত্রিবেলা
ভালোবাসা, জীবনযাপন!
জনতায় হাত ফেলে উত্তোলন,
যৌবনের কাছে কারো ফেলে আসা আর এক যৌবন,
আকাশের সুবিস্তৃত শূন্যতায় সহিষ্ণু ভুবন যদি পাই
তার ভাইকে যদি ভাই বলে ডাকি 

যদি দেখি, না,-
নারী তার অলঙ্কার 
মাঠ তার তৃণের সবুজ 
শিশু তার ত্রিভুজ-শুভ্রতা পেয়ে গেছেজ;

যদি দেখি, না-
পৃথিবীর কোথাও এখন আর যুদ্ধ নেই , ঘৃণা নেই , ক্ষয়ক্ষতি নেই

তাহলেই হাসতে হাসতে যা যার আপন ঘরে 
আমরাও ফিরে যেতে পারি! 

হাসতে হাসতে যা যার গন্তব্যে আমরা ফিরে যাতে পারি!

কথা দিয়েছিলি কেন, বলেছিলি কেন

কথা দিয়েছিলি কেন, বলেছিলি কেন
এখানে প্রাসাদ আছে , এখানে নন্দন 
চতুর্দিকে খোলা জানালা , হাওয়া আসে হাওয়া
কথা দিয়েছিলি কেন, বলেছিলি কেন

আঙ্গুলে সেলাই করবি আমার আঙ্গুল
বুক থেকে নামবি না পারদ বা পরিতৃপ্ত ঘৃণা
শরীরে ধনুক বেঁধে সুন্দরের ছিলা রাখবি টান
কথা দিয়েছিলি কেন, বলেছিলি কেন

আমাকে শাসাবি খুব, কষ্ট দিবি , ক্লান্তি দিবি, আর
রাত হলে স্বপ্ন দিবি শুতে দিবি বুকের খোঁপায়
শরীরে সেলাই করবি সেই সাপ, সেই আদি পাপ

হাতের পাতায় তোর বেলফুল, বক্ষময় লতা

কথা দিয়েছিলি কেন, বলেছিলি কেন

প্রতিক্ষার শোকগাথা

তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ পড়ে আছে দ্যাখে প্রশান্ত টেবিলে
আর আমার হাত ঘড়ি
নীল ডায়ালের তারা জ্বলছে মৃদু আমারই কব্জিতে!

ট্যুরিস্টের মতো লাগছে দেখতে আমাকে
সাংবাদিকের মতো ভীষণ উৎসাহী

এ মুহূর্তে সিগ্রেটের ছাই থেকে
শিশিরের মতো নম্র অপেক্ষার কষ্টগুলি ঝেড়ে ফেলেছি কালো এ্যাসট্রেতে!
রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আজ স্বাতী?

তোমার কথার মতো নরম সবুজ
কেকগুলি পড়ে আছে একটি পিরিচে 

তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ!

তোমার হাসির মতো উড়ছে চাইনিজ পর্দা রেস্তোরাঁয়

আর একটি অস্থির নীল প্রজাপতি পর্দার বুনট থেকে উড়ে এসে 
ঢুকে গেছে আমার মাথায় ! 

রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসছোনা আজ স্বাতী?
রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আর স্বাতী ?